হাফেজে কোরআনের মর্যাদা ও ফজিলত

হাফেজে কোরআনের মর্যাদা ও ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ সম্মানিত মুসলিম উম্মাহ, 
আমরা আজকের আর্টিকেল জুড়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব, 

হাফেজে কুরআনের মর্যাদা। হাফেজে কোরআনের ফজিল। হাফেজে কোরআন কাকে বলে। 

কোরআন এমন এক অনুপম গ্রন্থ যা নাযিল করেছেন বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা। যার হেফাজতের বড় দায়িত্ব আপন কাঁধে তুলে নিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই।

তাইতো এরশাদ হয়েছে আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ নাযিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক (সূরা হিজর আয়াত-৯) 

তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন সংরক্ষণের এই দায়িত্ব পরোক্ষভাবে নিজে পালন করবেন।
আর প্রত্যক্ষভাবে কিছু বান্দার মাধ্যমে পালন করাবেন।
যারা হবে অশেষ পুণ্যের অধিকারী। সর্বোপরি তারা হবে উভয় জাহানের সরদার, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য এবং খাঁটি উত্তরসূরী।

আর তারাই হলেন হাফেজে কোরআন। ভাবতে অবাক লাগে! ৩০ পারা কোরআন এর এত দীর্ঘকালাম একজন মানুষ কিভাবে মুখস্ত করে ফেলে!

৫ বা ৭ বছরের একটি ছোট খোকাও সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ করে নেয়। পবিত্র কালাম আত্মস্থ করা আসলে আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত। যাকে খুশি তাকে তিনি এই রহমত দান করেন।

উপরন্ত কোরআন মহাসত্য ও আল্লাহর কালাম হওয়ার বড় একটি প্রমাণও বটে। যা জ্ঞানী, মূর্খ সকলের পক্ষেই সহজেই অনুধাবন করা খুবই সম্ভব।

আমাদেরকে বুঝতে হবে হাফেজে কোরআন কে? 

শুধু কোরআন মুখস্থ করে নিলেই কি প্রকৃত হাফেজে কোরআন এর কাতারে শামিল হওয়া যাবে?

না তার কিছু করণীয় রয়েছে, কোরআন মাজীদ আত্মস্থ করায় প্রকৃত হাফিজুর কোরআন হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না নিজের জীবনকে কোরআন অনুযায়ী পরিচালিত করবে।

নামাজ, সিয়াম সাধনা সহ কোরআনের এক একটি বিধি-নিষেধকে জীবনে কার্যত বাস্তবায়ন করবে।

কুরআন হিফজ করার ফজিলত

হযরত মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক কন্ঠে ইরশাদ হয়েছে, আল কোরআন এমন সুপারিশকারী, যার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করা হবে না এবং এমন বিতর্ককারী যার বিতর্ক মেনে নেওয়া হবে।

যে ব্যক্তি আল কুরআনকে সামনে রেখে এবং সেই মোতাবেক আমল করবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে তাকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করবে তার বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করবে না,কোরআন তাকে জাহান্নামের অতল গহবরে ছুড়ে মারবে (ইবনে মাজাহ)

এ বিষয়টিকে যুক্তি ও সমর্থন করে। কেননা এ কথা সর্বজনীন স্বীকৃত যে, যে জিনিস যত উন্নত তার দুর্ঘটনার মাত্র তত মারাত্মক। আর কোরআন হেফজ করার পর তা ভুলে যাওয়া তো আরো বড় ধরনের অপরাধ।

হাফেজে কোরআনের কিছু মর্যাদার দিক আছে। 

যেমন হাফেজ সাহেব কে সম্বোধন করে বলা হবে পড়তে থাকো আর চড়তে থাকো এবং তার তেলের সাথে থেমে থেমে পড়ো, যেমনিভাবে দুনিয়াতে পড়তে।

আর তোমার আবাসস্থান হবে সে তলাতে, আয়াত পড়ে সমাপ্ত করবে যেখানে। (তিরমিজি শরিফ)

প্রত্যেক মমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে পাপী বান্দারা পাপের শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে।

হাফেজ হওয়ার ফজিলত

তবে কোরআনে হাফেজগন প্রথম থেকেই জান্নাতে প্রবেশের গৌরব অর্জন করবেন। তাদের পরিবারের যারা জাহান্নামী এমন দশজনকেও প্রথমবারই জান্নাতে নিয়ে যাবেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, তোমরা কোরআন শরীফ শিক্ষা করো এবং তা নিয়মিত তেলাওয়াত করো। 
কেননা, যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করে এবং তা পরে বিশেষত তাহাজ্জুদ নামাজে পড়ে, সে এমন সুগন্ধ মেশক পাত্রসম্মতুল্য , যার সুগন্ধি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

আর যে তা শিখে রাত্রে বেলায় ঘুমিয়ে থাকে সে এমন মেসক  পাত্র তুল্য যার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । (তিরমিজি)


অন্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার অন্তরে কোরআনের কোন শিক্ষা নাই তার অন্তর বিরাট ঘর সমতুল্য। (তিরমিজি) এরূপ আরো অসংখ্য হাদিসে হাফেজে কোরানের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।

সুতরাং যারা কোরআন হেফজ করাকে অনর্থক কাজ মনে করে তারা যেন দয়া করে এসব ফজিলতের ব্যাপারে একটু ভেবে দেখে।

এই একটি মাত্র ফজিলতি এতটা গুরুত্ব রাখে যে এর সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রত্যেককে জীবন উৎসর্গ করে দেওয়া উচিত।

কে আছে এমন যে পাপে লিপ্ত হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয় নাই। আর জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিষ্কৃতির এর চেয়ে সহজতর উপায় আর কি হতে পারে।

আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন। এবং আমাদের সন্তানদেরকে হাফেজে কোরআন বানানোর তৌফিক দান করুন আমীন।

প্রিয় দ্বীনি ভাই হাফেজে কোরআন এর গুরুত্ব ও মর্যাদার এই লেখাটি ভালো লাগলে আপনারা ফেসবুকে শেয়ার করুন।


Previous Post Next Post