নামাজের ১৩ টি ফরজ । নামাজের ফরজ সমূহ পূর্ণাঙ্গ আলোচনা। আপনি যদি নামাজের ফরজ সমূহ সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনার নামাজ হবে না।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রিয় পাঠক মহোদয় নামাজ মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে দামি এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
নামাজের ১৩ টি ফরজ
সহি হাদিসের বর্ণিত হয়েছে নামাজ ইসলামের মূল ভিত্তি অথবা খুঁটি। নামাজ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না। ওযুরবিহীন জেনে শুনে যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল সে ব্যক্তি কুফরি করলো।
নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নামাজের ভিতরে ফরজ সমূহ আমাদের জানা আবশ্যক, নামাজের ভিতরে এবং বাহিরের কোন একটি খরচ ছুটে গেলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিলে নামাজ সহি হবে না
এ কারণেই আপনি যদি নামাজের ফরজ না জানেন তাহলে আপনার নামাজ হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটাও জানতে এবং বুঝতে পারবেন না এ কারণে আজকের পোস্টে আমরা নামাজের ভিতরে এবং বাহিরের ১৩ টি ফরজের বিস্তারিত বিশদ আলোচনা করব।
ধৈর্য ও মনোযোগের সাথে আজকের প্রতিবেদনটি পরিপূর্ণ পড়বেন।
প্রশ্ন: নামাজের ফরজ কতটি?
উত্তর: নামাজের মোট ১৩ টি ফরজ।
প্রশ্ন: নামাজের বাহিরে কয় ফরজ?
উত্তর: নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ।
প্রশ্ন: নামাজের ভিতরে কয় ফরজ?
উত্তর: নামাজের ভিতরে ৬ ফরজ।
নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ সমূহ:
১.শরীর পাক হওয়া,
অর্থাৎ যে কোন ধরনের নাপাকি থেকে শরীরকে পবিত্র করতে হবে, যদি ফরজ গোসল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ফরজ গোসল করে নিতে হবে। ( সূরা মায়েদা আয়াত ৬)
২. কাপড় পাক হওয়া,
শরীরে পরিহিত পোশাক সমূহ যেকোনো নাপাক জিনিস থেকে পবিত্র হতে হবে যেমন লুঙ্গি গেঞ্জি শার্ট পাঞ্জাবি অথবা টুপি যাবতীয় কাপড় পাক হতে হবে ( সূরা মুদ্দাসসির আয়াত ৪)
৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া,
যে স্থানে আমরা নামাজে দাঁড়াবো সে স্থানটি পবিত্র হতে হবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য নিয়ে বিষয় হলো আমরা যদি মাটির উপর দাঁড়াই তাহলে মাটি পবিত্র কিনা সে সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ জানা থাকতে হবে জায়নামাজ বিছালে জায়নামাজ পবিত্রতার বিষয়ক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে খেয়াল রাখতে হবে যেন নামাজ কোনোভাবেই অপবিত্র না থাকে।( সূরা বাকারা আয়াত ১২৫)
৪. ছতর ঢাকা,
এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছতর কি এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই।
পুরুষের জন্য ছতর হল নাভি হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ছতর,
এবং মহিলাদের ছতর হলো- চেহারা, কব্জি পর্যন্ত দুই হাত, এবং দুই পায়ের পাতা বেঁধে রেখে সমস্ত শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত।
অর্থাৎ উল্লেখিত নিয়মে ছতর ঢাকতে হবে, নতুবা সতর না ডাকার কারণে নামাজ হবে না। (সূরা আরাফ আয়াত -৩১)
৫. কিবলা মুখি হওয়া,
নামাজে দাঁড়িয়ে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কিবলামুখী করে রাখা, নামাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সতর ঘুরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।(সূরা বাকারা আয়াত-১৪৪)
৬. ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া।
সকল নামাজের জন্য নির্ধারিত যে সময় রয়েছে সেই সময়ের দিকে লক্ষ্য রেখে নামাজ আদায় করা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো দিনের এমন কিছু সময় আছে যে সময়ে নামাজ পড়া যায় না সে সময় নামাজ পড়া হারাম এ কারণে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নামাজের উক্ত জেনে নামাজ পড়া । ধরুন আপনি ফজরের নামাজ পড়বেন কিন্তু ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গিয়েছে, তখন আপনাকে ফজরের ফরজ নামাজের কাজা আদায় করতে হবে।( সুরা নিসা আয়াত -১০৩)
৭. অন্তরের নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা,
এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশি একটি ভ্রুক্ষেপ করি না যে কোন নামাজের আগে মুখে না হলেও অন্তরে সারা রেখে যে আমি এই নামাজ পড়তেছি, এভাবে নিয়ত করে নামাজ পড়া ফরজ, নিয়ত ছাড়া নামাজ পড়লে সে নামাজ হবে না।( বুখারী শরীফ হাদিস নাম্বার_০১)
নামাজের ভিতরের ফরজ সমূহ:
১.তাকবীরে তাহরিমা বলা,
তাকবীরে তাহরিমা কি? এটা আমাদের অনেকের ই ধারণাতে নেই , তাকবীরে তাহরিমা হল নামাজের শুরুতে যে তাকবীর টি সর্ব প্রথম দেওয়া হয়, অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলা হয়,
এটাকেই তাকবীর তাহরিমা বলে। জামাতে অথবা একাকী নামাজ পড়ার সময় এই তাকবীরটি ইমাম মুক্তাদী সবার জন্য অবশ্যক।
কেউ যদি ইমামের সাথে নামাজ পড়া কালীন সময় তাকবীর না দেয় তাহলে তার নামাজ আদায় হবে না এজন্য নামাজের শুরুতে এই তাকবীর টি পরিপূর্ণ স্পষ্ট করে দিতে হবে।( সূরা মুদ্দাসসির আয়াত-০৩)
২. ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া,
যেকোনো নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া অবশ্যক, কেউ যদি নফল নামাজ অল্প অসুস্থতার কারণে বসে পড়তে চায় পড়তে পারবে কিন্তু ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ কঠিনতম অসুস্থতার কারণ ছাড়া বসে পড়তে পারবে না।( সূরা বাকারা আয়াত-২৩৮)
৩. কিরাত পড়া,
অর্থাৎ কোরআন শরীফের যে কোন স্থান থেকে নির্দিষ্ট কিছু অংশ পড়া, কমপক্ষে তিন আয়াত পড়া সুন্নত ( সূরা মুজাম্মিল আয়াত-২০)
৪. রুকু করা,
রুকু শব্দের অর্থ হল ঝোকা, মানুষের ন্যাচার হল কোন না কোন কিছুর কাছে মাথা নত করা তাই নির্দেশ হয়েছে কোরআনে নামাজে রুকু করতে হবে অর্থাৎ কোমরকে বাঁকিয়ে মাথাকে আল্লাহর দরবারে ঝুকিয়ে দিতে হবে। (সূরা হজ্জ আয়াত_৭৭)
৫. দুই সেজদা করা,(সূরা হজ্জ আয়াত-৭৭)
অন্য পোস্ট:- সিজদার বিস্তারিত নিয়ম পড়ুন
৬. শেষ বৈঠক,
অর্থাৎ নির্ধারিত রাখার শেষে তাশাহুদের জন্য বসে তাশাহুদ পরিমাণ সময় বসে থাকা এবং তাশাহুদ পড়া, এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো তাশাহুদ পড়তে যতক্ষণ সময় প্রয়োজন হয় ততক্ষণ সময় বসা ফরজ, এই সময় যদি কেউ না বসে তাহলে তার নামাজ হবে না।( আবু দাউদ হাদিস-৯৭০)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নামাজি ব্যক্তি নিজস্ব কাজের মাধ্যমে ( যেমন: সালাম ফিরানো) নামাজ থেকে বের হওয়া ও একটি ফরজ ( আল বাহরুর রায়িক,১:৫১৩)
উল্লেখযোগ্য: নামাজের কোন একটি ফরজ তরক হলে বা বাদ পড়লে নামাজ ভেঙ্গে যায় এমনকি সাহু সিজদা দিলেও নামাজ হবে না।( আল বাহরুর রায়িক, ১:৫০৫ + ফতোয়া শামী ১:৪৪৭ + হেদায়া ১:৯৮)
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো জেনে এবং সঠিকভাবে বোঝে নামাজ পড়লে নামাজের মনোযোগ বেড়ে যাবে সাথে সাথে আমরা প্রত্যেকটি ফরজ গুরুত্বের সহিত আদায় করতে সচেষ্ট থাকব ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় পাঠক টাইপিং অথবা মার্জিত কোন ভুল আপনাদের সামনে ধরা পড়লে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন পরবর্তী সংস্করণে আমরা তা শুধরে নেব।
দ্বীন ইসলামের প্রচারে পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার করে দিন জাযাকুমুল্লাহ।
আরো পড়ুন: বড়লোক হওয়ার দোয়া। মনের আশা পূরণের দোয়া